বাংলা উচ্চারণের নিয়ম

Written by Rysertio
বাংলা ভাষায় বানান ও উচ্চারণ বেশ আলাদা। এর মুল কারণ বাংলা ভাষার বেশীরভাগ শব্দের বানান এসেছে সংস্কৃত থেকে, কিন্তু সেগুলোর উচ্চারণ লোকমুখে পরিবর্তিত হয়ে আমাদের বর্তমানে ব্যাবহার করা বাংলা উচ্চারণে পরিণত হয়েছে। এর ফলে ক্ষ এর উচ্চারণ ক+খ হয়েছে, যদিও বানানে লেখা হয় ক+ষ। নিচে উচ্চারণের কয়েকটা নিয়ম দেয়া হল। উল্লেখ্য ব্যাকরণের সব নিয়মের মতই এগুলোর ব্যাতিক্রম আছে।

এগুলোকে 2 ভাগে ভাগ করা যায়ঃ

  1. স্বরবর্ণ উচ্চারণের নিয়ম
  2. ব্যাঞ্জনবর্ণ উচ্চারণের নিয়ম

স্বরবর্ণ উচ্চারণের নিয়ম

সকল স্বরবর্ণে প্রযোজ্য

  • উচ্চারণে সর্বদা হস্রস্বর উচ্চারিত হবে। যেমনঃ ঈ উচ্চারণে ই হবে, ঊ উচ্চারণে উ হবে। যেমন ঈগল(ইগোল্‌), ঊষা(উশা)…

অ উচ্চারণের নিয়ম

  • অ এর পর ই,উ, ঋ কার, য ফলা , ক্ষ, জ্ঞ থাকলে অ এর উচ্চারণ ও এর মত হয়। যেমন গরিব(গোরিব্‌), গরু(গোরু), অধ্যক্ষ(ওদ্‌ধোক্ষ)…

আদ্য অ

  • নাবোধক অ এর উচ্চারণ সর্বদা অ এর ন্যায় থাকবে। যেমন অনিবার্য(অনিবার্‌জো), অভেদ(অভেদ), অগ্রাহ্য(অগ্রাজঝো)…
  • র-ফলা যুক্ত আদ্য অ এর উচ্চারণ ও এর মত হয়। যেমন প্রতিরোধ(প্রোতিরোধ্‌), প্রহার(প্রোহার্), গ্রহ(গ্রোহো)…
    • একাক্ষর শব্দের শেষে য় থাকলে এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়। যেমন ক্রয়(ক্রয়্‌)…

মধ্য অ

  • মধ্য অ এর আগে অ , আ , এ , ও থাকলে তার উচ্চারণ ও এর মত হয়।
  • কিছু সমাসবদ্ধ তৎসম শব্দের পূর্বপদের অন্ত অ টি ও এর ন্যায় উচ্চারিত হয়। এর অনেক ব্যাতিক্রম রয়েছে।

অন্ত অ

  • সাধারনত উচ্চারিত হয় না।
  • ত, ইত প্রত্যয়ন্ত শব্দ বিশেষণ হলে অন্ত অ, ও এর মত উচ্চারিত হয়।
  • য় এর আগে ই, এ থাকলে অন্ত অ, ও এর মত উচ্চারিত হয়।
  • বিশেষ্যের শেষে হ থাকলে অন্ত অ, ও এর মত উচ্চারিত হয়।
  • যুক্তবর্ণের সাথে থাকা অন্ত অ, ও এর মত উচ্চারিত হয়।
  • ং,ঃ এর পর অন্ত অ, ও এর মত উচ্চারিত হয়।
  • পূর্বে বিসর্গ ছিল কিন্তু প্রমিত বানানে তা বর্তমানে না থাকলেও এই নিয়ম প্রযোজ্য
  • তর, তম প্রত্যয়ন্ত শব্দে অন্ত অ, ও এর মত উচ্চারিত হয়।
  • ক্রিয়াপদের অন্ত অ, ও এর মত উচ্চারিত হয়।

আ উচ্চারণের নিয়ম

  • জ্ঞ , য ফলা এর সাথে যুক্ত আ কারের উচ্চারণ অ্যা হয়।

এ উচ্চারণের নিয়ম

  • আদ্য এ এর পর অ, আ, ং, ঙ থাকলে তার উচ্চারণ অ্যা হয়।
    • অ, আ, ং, ঙ এর পর ই, উ থাকলে ও এর উচ্চারণ অবিকৃত থাকে।
  • ধাতুতে এ কার থাকলে এবং তার সাথে আ যুক্ত হলে এ এর উচ্চারণ অ্যা হয়।
  • একাক্ষর সর্বনামে এ অবিকৃত থাকে।

ব্যাঞ্জনবর্ণ উচ্চারণের নিয়ম

ক্ষ উচ্চারণের নিয়ম

  • শুরুতে থাকলে উচ্চারণ ক
  • মাঝে/শেষে থাকলে উচ্চারণ কখ

জ্ঞ উচ্চারণের নিয়ম

  • শুরুতে থাকলে উচ্চারণ গ্যঁ
  • মাঝে/শেষে থাকলে উচ্চারণ গঁগ

ব-ফলা উচ্চারণের নিয়ম

  • শুরুতে থাকলে অনুচ্চারিত
  • মাঝে/শেষে থাকলে ব্যঞ্জন দ্বিত্ব হয়।
  • সন্ধি ও সমাসবদ্ধ পদে অবিকৃত উচ্চারণ।
  • ব ও ম এর সাথে যুক্ত হলে অবিকৃত উচ্চারণ।
  • উৎ উপসর্গের সাথে যুক্ত হলে অবিকৃত উচ্চারণ।
  • যুক্ত ব্যঞ্জনের সাথে যুক্ত থাকলে অনুচ্চারিত

ম-ফলা উচ্চারণের নিয়ম

  • শুরুতে থাকলে অনুচ্চারিত
  • কিছু তৎসম শব্দে অবিকৃত উচ্চারণ।
  • গ , ঙ , ণ , ন , ম , ল এর সাথে যুক্ত হলে অবিকৃত উচ্চারণ।
  • যুক্ত ব্যঞ্জনের সাথে যুক্ত থাকলে অনুচ্চারিত।

য-ফলা উচ্চারণের নিয়ম

  • শুরুতে থাকলে উচ্চারণে সামান্য শ্বাসাঘাত পড়ে।
  • শুরুতে থাকলে ও তার পর ই থাকলে য ফলাযুক্ত ব্যঞ্জনে এ কার যুক্ত হয়।
  • মাঝে/শেষে থাকলে ব্যঞ্জন দ্বিত্ব হয়।
  • যুক্ত ব্যঞ্জনের সাথে যুক্ত থাকলে অনুচ্চারিত।

র-ফলা উচ্চারণের নিয়ম

  • মাঝে/শেষে থাকলে ব্যঞ্জন দ্বিত্ব হয় এবং র ফলা উচ্চারিত হয়।

ল-ফলা উচ্চারণের নিয়ম

  • মাঝে/শেষে থাকলে ব্যঞ্জন দ্বিত্ব হয় এবং ল ফলা উচ্চারিত হয়।

শ, ষ, স উচ্চারণের নিয়ম

  • স্বাভাবিকভাবে উচ্চারণ শ হয়।
  • কিছু যুক্তবর্ণে শ - এর উচ্চারণ স
  • যুক্তবর্ণে স - এর উচ্চারণ স
  • বিদেশী শব্দে স - এর উচ্চারণ স

হ - সংযুক্ত ব্যঞ্জন উচ্চারণের নিয়ম

এতে যুক্ত থাকা ব্যাঞ্জনটি মহাপ্রাণ হয়।

  • যুক্ত থাকা ব্যাঞ্জনটি
    • ন ও ম হলে দুইবার উচ্চারিত হয়। প্রথমবার অল্পপ্রাণ এবং দ্বিতীয়বার মহাপ্রাণ।
    • ব হলে এর উচ্চারণ ভ হয়।
    • য হলে এর উচ্চারণ জঝ হয়।
    • ল ও র হলে এর শেষে হ যুক্ত হয়।

য উচ্চারণের নিয়ম

  • য এর উচ্চারণ জ হয়।